
২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আগে এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ভর্তি সাময়িক বাতিল করা হয়েছে।
বৈধ ছাত্রত্ব না থাকার কারণে একই বছরে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে গোলাম রাব্বানীর প্রার্থীতাও বৈধ ছিল না। তার পরিপ্রেক্ষিতে জিএস নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে অবৈধ ঘোষণার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সর্বশেষ সভায় তার ভর্তি সাময়িক বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুদ্দীন আহমদ।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সব সদস্যদের ডাকসুর সদস্য পদ বাতিল চেয়ে অভিযোগ দায়ের করেন ওই নির্বাচনের জিএস প্রার্থী রাশেদ খাঁন এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মো. সানাউল্লাহ হক। অভিযোগে তারা ভুক্তভোগী প্রার্থীদের মূল্যায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে ডাকসু ভবনে সংঘটিত নৃশংস হামলার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিচার দাবি করেন।
পরবর্তীতে গঠিত হওয়া তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে কিছু প্রার্থী/প্যানেলের পক্ষ থেকে ভোটদান, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, ভোট কারচুপি করা, ভোটদানের জন্য কৃত্রিম লাইন সৃষ্টি করা, ভোটকেন্দ্র দখল করা, ব্যালট পেপারে অবৈধভাবে সিল মারা, ভোটদানে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা, অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, ব্যালট-বাক্সসহ নানা কারচুপি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন।
এতে আরও বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণাদি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাক্ষাৎকার থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে কমিটির কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, ক্রিমিনোলজি বিভাগের গোলাম রাব্বানী, মেহজাবিন হক ও ফাহমিদা তাসনিম অনির এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। অতএব উক্ত ভর্তি আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বাতিল বলে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় বৈধ ছাত্রত্ব না থাকার কারণে গত ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে গোলাম রাব্বানীর প্রার্থিতা বৈধ ছিল না। সুতরাং এই কমিটি গোলাম রাব্বানীর জিএস নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে অবৈধ ঘোষণার জন্য জোর সুপারিশ করা হলো।
পরবর্তীতে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ক্রিমিনোলজি বিভাগের গোলাম রাব্বানী, মেহজাবিন হক ও ফাহমিদা তাসনিম অনির এমফিল প্রোগ্রামে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের এমফিল ভর্তি সাময়িকভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাদের এমফিল ভর্তি বাতিলের বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে তৎকালীন জিএস প্রার্থী রাশেদ খান বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই যে, তারা গুরুত্বের সহিত আমার অভিযোগ বিবেচনা করেছে। গোলাম রাব্বানী শিক্ষার্থীদের ভোটে জিএস নির্বাচিত হয়নি। তৎকালীন প্রশাসন ফলাফল ছিনতাই করে রাব্বানীকে জিএস ঘোষণা করে। দীর্ঘসময় পরে হলেও আমি ন্যায়বিচার পেতে যাচ্ছি। এতোটুকুতেই আমার তৃপ্তি যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রমাণ পেয়েছে 'গোলাম রাব্বানীর জিএস নির্বাচিত হওয়া অবৈধ ছিল।’