আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নামের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা শুরু করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে ২৩৭ আসনে প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছেন, তার মধ্যে ১২ আসনে ১০ নারীর নাম রয়েছে।
তাদের মধ্যে কেবল বেগম খালেদা জিয়ার জন্য তিনটি আসন ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে প্রার্থী হতে পারেন। এর আগে বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনেও নির্বাচন করেছেন; কখনো হারেননি।
এর বাইরে আর যেসব নারী নেত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন:
• সানজিদা ইসলাম তুলি (ঢাকা-১৪): গুম হওয়া পরিবারগুলোর প্রতিবাদের প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’ এর সমন্বয়ক তিনি। ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম নয়নকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময়ই সুমনের মা হাজেরা খাতুনকে কেন্দ্র করে তার পরিবারের উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘মায়ের ডাক’ নামের সংগঠনটি।
• আফরোজা খানম রিতা (মানিকগঞ্জ-৩): মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী মুন্নুর চেয়ারওম্যান। রিতার বাবা হারুনার রশীদ খান মুন্নু এ শিল্পগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
• তাহসিনা রুশদীর লুনা (সিলেট-২): এ আসনের সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১২ সালে গুমের শিকার হন ইলিয়াস; এরপর থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হন তার স্ত্রী লুনা।
• শামা ওবায়েদ (ফরিদপুর-২): দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তার বাবা প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমান বিএনপির মহাসচিব (১৯৮৬-৮৮) ছিলেন; পালন করেছেন একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব।
• চৌধুরী নায়াব ইউসুফ (ফরিদপুর-৩): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, এবং মহিলা দল ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক আহ্বায়ক। তার বাবা প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পাশাপাশি একাধিকবার মন্ত্রী ছিলেন। নায়াবের দাদা ইউসুফ আলী চৌধুরী ছিলেন মুসলিম লীগ নেতা এবং প্রপিতামহ চৌধুরী মঈজউদ্দীন বিশ্বাস ছিলেন জমিদার।
• ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো (ঝালকাঠি-২): সাংসদ জুলফিকার আলী ভুট্টো হত্যার শিকার হওয়ার পর তার স্ত্রী ইলেন ২০০০ সালে সাংসদ হোন। এরপর তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুকে পরাজিত করে ফের জয়ের মুখ দেখেন।
• ফারজানা শারমিন পুতুল (নাটোর-১): দলের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও মিডিয়া সেলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হাই কোর্টের এ আইনজীবী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার কমিশনের সদস্য ছিলেন। তার বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান পটল বিএনপির মনোনয়নে চারবারের এমপি ছিলেন।
• সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা (শেরপুর-১): জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর মেয়ে তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী ছিলেন প্রিয়াংকা।
• সাবিরা সুলতানা মুন্নী (যশোর-২): ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য স্থানীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। মুন্নীর স্বামী নাজমুল ইসলাম একসময় ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও যশোর জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১১ সালে ঢাকায় অপহরণ হওয়ার পর নাজমুলের লাশ মিলেছিল গাজীপুরে। এর আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে দলীয় প্রার্থীদের নামের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর পর আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন পেতে যাচ্ছি। নির্বাচনে ২৩৭ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব আসনে যুগপৎ আন্দোলন সঙ্গীদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে, সেটি বিএনপি সমন্বয় করে নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
                                
                                


