
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। ওই হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কমিশন। তারা ইমেইলের মাধ্যমে তদন্ত কমিশনকে জবানবন্দী দিয়েছেন।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিআরআইসিএম নতুন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানায় কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ওই হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কারও নাম প্রকাশ করা হবে না বলেও জানান তিনি।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ইতোমধ্যে ১৫৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তদন্তের জন্য নোটিশ পাওয়া দুজন পলাতক আওয়ামী নেতার জবানবন্দি নিয়েছে স্বাধীন তদন্ত কমিশন। এই দুই নেতা ইমেইলে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী মির্জা আজম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বেঁচে ফিরে আসা ১৫ জন অফিসারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৫০ জন বেঁচে যাওয়া অফিসারদের লিখিত জবানবন্দী দেয়ার জন্য সেনা সদরের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুটি সম্মেলনে তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে।
সামরিক, আধা সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ
এ ঘটনায় তদন্ত কমিশন সেই সময়ের সামরিক, আধা সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তারা সেই সময়ে কী কী করেছেন এবং তাদের কি ভূমিকা ছিল তাও জানিয়েছেন। তবে দুই আওয়ামী লীগের নেতা দেশে না থাকায় তারা ইমেইলে তাদের জবানবন্দী দিয়েছেন।
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান বলেন, এঘটনায় জড়িত ৮ জন সংশ্লিষ্ট রাজনীতিকের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জনের সাক্ষাৎকার জেলে নেওয়া হয়েছে। ৩ জন উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। দুইজন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ই-মেইলে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ৫৫ জন সামরিক অফিসার যারা বিভিন্নভাবে পিলখানা ট্র্যাজেডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তাদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক সাবেক সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।এছড়াাও ২০ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, আমলা ও পূর্বতন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তারা ছাড়াও তৎকালীন আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি ব্যক্তি, কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিডিআর সদস্য, বিদেশি সংস্থা ও দূতাবাস কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, সেই সময়ের এ ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটি বেসরকারি ব্যক্তি, কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিডিআর সদস্য, বিদেশি সংস্থা ও দূতাবাস কর্মকর্তারাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
ফজলুর রহমান আরও বলেন, ৯ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি যাদের কাছে ঘটনা সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫ জন বিডিআর সদস্যের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এবং ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সে সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য দিয়েছেন, যেগুলো এখন বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আরও সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। এছাড়াও ২৯ জন কারামুক্ত বিডিআর সদস্যের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তারা ছাড়াও তদন্তের স্বার্থে ৬টি দেশের দূতাবাস ও ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।