
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধন পেতে দেড়শ’ নতুন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে। আজ শেষ দিন আবেদন করেছে প্রায় ৬০টির মতো দল। যার মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি, আম জনগণ পার্টি, জনতা পার্টি বাংলাদেশও রয়েছে।
রোববার (২২ জুন) সকাল থেকেই আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে দলগুলোর নেতাকর্মীদের আনাগোনা দেখা যায়। তবে দিন যত গড়িয়েছে ততোই নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ভিড় বেড়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল নির্বাচন কমিশন ভবনসহ আগারগাঁও এলাকা।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে ৯৩টির মতো দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল। তার মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি আর বিএনএম কেবল নিবন্ধন পেয়েছিল। তবে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আদালতের আদেশে আরও কয়েকটি দল নিবন্ধন পেয়েছিল। গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি দল আবেদন করেছিল। তবে সময় বাড়ানোর পর সবমিলিয়ে এবার আবেদন পড়ল ১৫০টির মতো। এই সংখ্যা কিছুটা এদিক সেদিক হতে পারে।
এবার আলোচনায় থাকা দলগুলো যা বলছে
এনসিপি সকল শর্ত পূরণ করে আবেদন জমা দেওয়ার পর নিবন্ধন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আজকে ইসিতে এনসিপির দল নিবন্ধনের জন্য সকল শর্ত পূরণ করে কাগজপত্র দাখিল করেছি। গঠনতন্ত্রসহ আমরা আবেদন জমা দিয়েছি। আমরা তিনটি মার্কার জন্য আবেদন করেছি শাপলা, কলম ও মোবাইল। আমরা আশাবাদী শাপলা মার্কা পাব এবং তা নিয়ে জনগণের মাঝে কাজ করব।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের যেসব আইন রয়েছে; সেই আইনগুলো আমরা পর্যালোচনা করেছি। আইনে কোনো ধরনের সমস্যা নাই আমরা দেখেছি। জাতীয় ফল কাঁঠাল একটি দলের মার্কা হিসেবে আছে। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখিনি বলে আমরা এই প্রতীকে আবেদন করেছি। জাতীয় প্রতীক কিন্তু কেবল শাপলা নয়; শাপলা, ধানের শীষ, তারকা এগুলো মিলে জাতীয় প্রতীক। সেক্ষেত্রে তারকা ও ধানের শীষ দুটি দলের মার্কা হিসেবে রয়েছে। কোনো ধরনের আইনগত সমস্যা আমরা দেখি না।
দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, প্রস্তাবিত জাতীয় সংসদের ৪০০ আসনের মধ্যে ৩০০ আসন পেয়ে এনসিপি জাতীয় সরকার গঠন করবে। জনগণের ম্যান্ডেন্ট নিয়ে ব্যালট বিপ্লব সম্পন্ন করবে এনসিপি। জনগণের দাবি হিসেবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনও (ইসি) পুনর্গঠন হবে। কোনো বিকল্প বি অপশন নেই।
ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের গড়া দল আম জনগণ পার্টি আনারস, কলম বা ঘণ্টা প্রতীক চেয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। আবেদন জমা দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটিসহ যেভাবে ইসি চেয়েছে সেভাবেই আমরা সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছি। আগামী দিনে আমরা ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি এবং রাজনীতি চালু করতে পারব বলে আশাকরি। আমরা বিশ্বাস করি বহুদলীয় গণতন্ত্র। গণতন্ত্র চর্চা, সর্বত্র ন্যায়ভিত্তিক চর্চা করার জন্য নিবন্ধন দিয়ে রাজনীতিতে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ চালু করার জন্য সরকারের মাধ্যমে ইসির প্রতি আশা করি।
হাতি প্রতীকে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে জনতা পার্টি বাংলাদেশ (জেপিবি)। দলটির মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। নিবন্ধন বিধিমালার যেসব শর্ত আছে সেগুলো পালন করা খুব কষ্টকর। নির্বাচন সংস্কার কমিশন এই বিধিমালার কিছু কিছু বিধিমালা সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে। এই প্রস্তাবগুলো কিন্তু এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। তারপরও পুরোনো বিধিমালা অনুযায়ী আমরা আবেদন জমা দিয়েছি এবং আমরা আশা করি আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাব।
এছাড়া চাবি প্রতীকে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে জনতার দল। আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামীম কামাল বলেন, নিবন্ধনের সকল শর্ত পূরণ করে আমরা আবেদন করেছি। আমাদের জেলা ও উপজেলা কমিটি আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। এখন বাকি সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের জন্য সাহসী, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক মানুষদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্দেশ্য পরবর্তী প্রজন্ম; সামনে নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম। গত ৫৪ বছরে দেশের রাজনীতিতে সুষ্ঠু ধারা তৈরি হয়নি। যে রাজনৈতিক সংস্কার, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তা গড়ে ওঠেনি। এই জায়গাতে আমরা মনে করি যদি সৎ, শিক্ষিত ভালো মানুষ একত্র হই তাহলে সুষ্ঠু ধারা তৈরি করতে পারব।
গত ১০ মার্চ নতুন নিবন্ধন আবেদন জমা নেওয়ার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দেয় ইসি। সেই সময় ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া থাকলেও এনসিপিসহ কয়েকটি দলের আবেদনে প্রেক্ষিতে দুই মাস বাড়িয়ে আজ রোববার (২২ জুন) পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছিল সংস্থাটি।
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে বিদ্যমান আইন-বিধি অনুযায়ী, ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়েছে। নিবন্ধন ফি হিসেবে দিতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা, যা অফেরতযোগ্য।
আবেদন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন তা যাচাই-বাছাই শুরু করবে। নিবন্ধন শর্ত পূরণ করতে পারলে দলীয় প্রতীকসহ নিবন্ধন সনদ দেওয়া হবে।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), এবি পার্টি, নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলন নামের দলগুলোকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এগুলোর প্রায় প্রতিটিই আবেদনের পাঁচ থেকে ছয় বছর পর আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালেও শর্ত পূরণ না করার কারণ দেখিয়ে ৭৬টি দলের কোনোটিকেই নিবন্ধন দেয়নি ইসি। পরে ২০১৯ সালে ববি হাজ্জাজের দল এনডিএম আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছিল।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো- জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন দিতে আবেদন আহ্বান করেছে ইসি। সম্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি এখনও প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।