Image description

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত থেকে বাস্তবিক অর্থে ‘পুশ ইন’ (ঠেলে পাঠানো) ঠেকানো সম্ভব নয়। দুই দেশের বিদ্যমান কনস্যুলার সংলাপের মাধ্যমে এ সমস্যাকে একটা প্রক্রিয়া অনুযায়ী সুরাহা করা যায় কি না, সে বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা জানান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারত থেকে পুশ ইন হচ্ছে। সেটা ফিজিক্যালি (সীমান্তে বাধা দিয়ে) ঠেকানো সম্ভব নয়। এটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে চিঠি আদান–প্রদান হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি, এটি যাতে পদ্ধতি অনুযায়ী হয়। তারা কিছু ক্ষেত্রে বলেছে, অনেক কেস (বিষয়) আটকে রয়েছে, সেগুলো ঠিকমতো বাংলাদেশ করছে না। যাচাই করে দেখেছি, খুব দীর্ঘদিনের তালিকা রয়েছে। পাশাপাশি এটাও দেখেছি যে ভারতের তালিকা অনুযায়ী যাচাই করে অনেককে ফেরত নেওয়া হয়েছে। কাজেই দুপক্ষের বক্তব্য থাকতে পারে।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘কনস্যুলার সংলাপ (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা দূতাবাসের কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা) ব্যবহার করে বিষয়গুলোকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি কি না, আমরা সে চেষ্টা করছি। নিয়মিত পদ্ধতিতে যাতে হয়, তার জন্য বাংলাদেশ আরেকটি চিঠি দেবে ভারতকে। তারা যে তালিকা দিয়েছে, তা যাচাই করে যাঁদের বাংলাদেশি পেয়েছি, তাঁদের ফেরত নিয়েছি।’

প্রতিবাদপত্র নাকি কূটনৈতিক পত্র পাঠানো হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা একটি বস্তুনিষ্ঠ চিঠি পাঠাব। যেটাতে পদ্ধতির কথা উল্লেখ করব।’ প্রসঙ্গত, গত মাসের শুরুতে ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশ ইন শুরুর পর দেশটিকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়ে তা বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে পাঠানো চিঠি নিয়ে ভারত থেকে ফিরতি কিছু আসেনি। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে অবশ্যই দ্বিতীয় চিঠি দেওয়া হবে।

সীমান্তে বেসামরিক নাগরিক হত্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নমনীয় হয়ে গেছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে নমনীয়তা দেখানো সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করছি এবং এ প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। অবশ্যই সীমান্ত হত্যা নিয়ে খুব শক্ত ভাষায় প্রতিবাদ করব। সীমান্ত হত্যাকে কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা পৃথিবীর আর কোনো সীমান্তে নেই।’

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমার তো মনে হয়, যেটা দেখতে পেয়েছে, সেটা হলো এতে (বাংলাদেশের জন্য ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল) শাপে বর হয়েছে। তাদের (ভারতের) ওপর নির্ভরশীলতা কমে গেছে। আমাদের কোনো রপ্তানি কিন্তু তাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।’

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পর ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরাও তো প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের একটা সুবিধা বাতিল করেছি। আমরা তাদের থেকে সুতা আমদানি বন্ধ করেছি। সেটা আমাদের প্রয়োজন ছিল বলেই করেছি। এখন তারা যেটা করেছে, সেটা তারা তাদের প্রয়োজনের জন্য করেছে কি না, আমি জানি না।’

সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা বন্ধ বা কমিয়ে দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘যে সিদ্ধান্তগুলো আমাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়, তার অনেকখানির জন্য আমরা দায়ী। আমরা, আমাদের দেশের মানুষ, আমাদের ব্যবসায়ীরা দায়ী। বিশেষ করে যাঁরা শ্রমশক্তি রপ্তানি করেন।’ তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় তো বাংলাদেশের প্রতি কোনো বিরূপ মনোভাব নেই। আমাদের ঘর সামলাতে হবে এ ক্ষেত্রে।’