ফিলিস্তিনের সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অন্তত ১৯৪ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করেছে। সংস্থাটির পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতেহ রোববার (২ নভেম্বর) আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, এসব লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করে সামরিক অনুপ্রবেশ, গুলি ও গোলাবর্ষণ, বিমান হামলা এবং মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করা।
তিনি বলেন, “চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে দখলদার বাহিনী ১৯৪টি লঙ্ঘন করেছে। আমরা ভেবেছিলাম চুক্তি কিছুটা স্বস্তি আনবে, কিন্তু তা হয়নি।”
মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী বারবার ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করে আবাসিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে এবং এসব হামলায় বহু বেসামরিক মানুষ হতাহত হচ্ছে। এই ‘হলুদ রেখা’ হচ্ছে সেই অঞ্চল, যেখান থেকে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করেছিল।
থাওয়াবতেহ জানান, ইসরায়েল এখনো ত্রাণ কনভয়গুলোর পূর্ণ প্রবেশের অনুমতি দেয়নি এবং বিদেশে চিকিৎসার জন্য রোগীদের সরিয়ে নিতে মিশরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিংও খুলেনি। চুক্তির আওতায় অনুমোদিত ১৩,২০০ ট্রাকের মধ্যে মাত্র ৩,২০৩টি গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে—যা মোটের মাত্র ২৪ শতাংশ।
তিনি অভিযোগ করেন, “ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে মানবিক সংকট আরও তীব্র করছে। রাফাহ সীমান্তে ছয় হাজারের বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে রাখা হয়েছে।”
চুক্তি অনুযায়ী ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য শত শত ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশের কথা থাকলেও, বাস্তবে কেবল ইসরায়েলি বন্দীদের মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য সীমিত কিছু যন্ত্র প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো প্রায় ৯,৫০০ ফিলিস্তিনি নিখোঁজ বা নিহত অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য ৩ লাখের বেশি তাঁবু ও মোবাইল হোম প্রবেশের কথা থাকলেও, ইসরায়েল তা কার্যকর না করায় ২ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি পরিবার উন্মুক্ত স্থানে বসবাস করছে।
গাজা সরকারের হিসাবে, এখন পর্যন্ত ভূখণ্ডের প্রায় ৯০ শতাংশ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী, যার প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার। থাওয়াবতেহ আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তাঁরা অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে ইসরায়েলকে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করেন।
                                
                                


