
একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে কাঠমান্ডুর রাস্তায় নামা জেন-জি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট এই তথ্য জানিয়েছে।
কাঠমান্ডু পোস্ট বলছে, রাজধানী কাঠমান্ডুতে নিরাপত্তা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে সংসদ ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার লক্ষ্যে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ চত্বরে প্রবেশ করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিয়েছেন। এছাড়া দাঙ্গা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথরও নিক্ষেপ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক তরুণ ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। পুলিশের ছোড়া একটি গুলি আমার পাশ দিয়ে চলে গেছে। সেই গুলি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের হাতে বিদ্ধ হয়েছে।
কাঠমান্ডু উপত্যকা পুলিশের কর্মকর্তা শেখর খানাল ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৮ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেককে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা কারফিউর বিধিনিষেধ ভেঙে পার্লামেন্টের কাছে সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়ার পর নেপালের রাজধানীতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় কারফিউর আওতা বাড়িয়েছে। শুরুর দিকে কর্তৃপক্ষ কেবল রাজধানীর বানেশ্বর এলাকায় কারফিউ দিয়েছিল। সহিংসতার পর নতুন করে প্রেসিডেন্টের বাসভবন শীতল নিবাস, মহারাজগঞ্জের লাইনচুরে ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন, সিঙ্গা দুর্বার এলাকার সব অংশ, বালুওয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও সংলগ্ন এলাকায় কারফিউ জারি হয়েছে।
স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই কারফিউ বলবৎ থাকবে, বলেছে কর্তৃপক্ষ।
বানেশ্বরে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে কান্তিপুর টেলিভিশনের সাংবাদিক শ্যাম শ্রেষ্ঠাও রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির শহর দামাকেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
কাঠমান্ডুতে সহিংসতার পর নেপালের বিভিন্ন অংশেও বিক্ষোভের খবর মিলছে। পোখারায় বিক্ষোভকারীরা মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভাঙচুর করার পর সেখানেও কারফিউ জারি হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী ওলি।
কয়েক ডজন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ও দেশজুড়ে বিদ্যমান দুর্নীতির সংস্কৃতির অবসান চেয়ে সোমবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল তরুণরা।
নেপালের সরকার শুক্রবার ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম ব্লক করে দেয়ার পর ফেসবুক, এক্স, ইউটিউবসহ ওই সোশ্যাল মিডিয়ার সাইটগুলোতে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ এশীয় দেশটির লাখ লাখ ব্যবহারকারী ক্রুদ্ধ ও হতাশ হয়, বলছে প্যারিসভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থা।
নেপালে লাখ লাখ ব্যবহারকারী ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে নিয়মিত ঢোকে; বিনোদন, খবর ও ব্যবসার জন্যও অনেকে এসব প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল।
সোমবার কাঠমান্ডুতে তরুণদের কর্মসূচি শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে; পরে তারা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ইউজান রাজভাণ্ডারি বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আমাদের টনক নড়িয়েছে, যদিও এখানে একত্রিত হওয়ার এটিই একমাত্র কারণ নয়। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করছি, কেননা দুর্নীতি নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।
আরেক শিক্ষার্থী, ২০ বছর বয়সী ইক্ষমা তুমরক বলেছেন, সরকারের ‘কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি’ তাকে ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্যরা এসব মেনে নিয়েছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মের হাতে এর শেষ হবে।
ফেসবুক, এক্স ও টুইটারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর নেপালে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও রাজনীতিকদের সন্তানদের বিলাসী জীবনযাপন ও ছুটি কাটানোর তুলনা দিয়ে করা অনেক ভিডিও টিকটকে ভাইরাল হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় না পড়ায় টিকটক এখনও দেশটিতে সচল রয়েছে।
অনলাইন জালিয়াতি ও অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়াকে কারণ দেখিয়ে জুলাইয়ে নেপালের সরকার ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রাম বন্ধ করে দিয়েছিল।
নেপালের আইনকানুন মানতে সম্মত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ গত বছরের অগাস্টে টিকটকের ওপর থাকা ৯ মাসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল।