
ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া বিদেশি যোদ্ধারা ২১ জুলাই ক্রোপিভনিতস্কির কাছে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে দুপুরের খাবারের সময় রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাতে জানা গেছে, হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। ২১ জুলাই ইউক্রেইনের ক্রোপিভনিতস্কি শহরের কাছে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এই ঘটনাটি ঘটে ।
প্রশিক্ষণ শিবিরটির মেসের হলে দুপুরের খাবারের সময় হামলাটি হয়, যাকে ইউক্রেইন যুদ্ধে বিদেশি যোদ্ধাদের ওপর হওয়া অন্যতম সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নিউজ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইউক্রেইনের সেনাবাহিনী সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলার কথা কদাচিৎ স্বীকার করলেও এ হামলার সেনাদের হতাহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে কিন্তু বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হয়নি।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীসহ তিনজন সেনা তীব্র এই হামলার কথা বর্ণনা করেছেন যা যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, তাইওয়ান, ডেনমার্ক ও অন্য দেশগুলোতে থেকে সংগ্রহ করা নতুন সেনাদের ওপর চালানো হয়েছিল।
রাশিয়ার তুলনামূলক বৃহত্তর ও উন্নত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের বাহিনীকে শক্তিশালী করতে ইউক্রেইন বিদেশি সেনা মোতায়েন করে আসছে। রাশিয়া প্রায় প্রতিদিন ইউক্রেইনে বোমাবর্ষণ করছে। এমনকী যুদ্ধ শেষ করা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার আলাস্কায় প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরিকল্পনরা করা সত্ত্বেও হামলা বন্ধ হয়নি।
ওই সেনারা জানিয়েছেন, নতুন যোগ দেওয়া সেনারা যখন টেবিলে দুপুরের খাবার খেতে বসেছে তখন ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি চালানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে গিয়ে ইউক্রেইনীয় বাহিনীতে যোগ দেওয়া এক সেনা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই বিস্ফোরণের মতো প্রচণ্ড শব্দ তিনি এর আগে আর কখনো শুনেননি। টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বিস্ফোরণের ধাক্কায় তার চারপাশে আবর্জনা ছিটকে পড়ে আর নিকটবর্তী গাছগুলো ভীষণভাবে ঝাঁকুনি খেতে থাকে।
বিস্ফোরণের পর মৃত ও খণ্ডিত দেহগুলো আর মারাত্মকভাবে আহত সেনারা মেসের হলের কাছের মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। তিনি জানান, তিনি অন্তত ১৫ সেনার মৃতদেহ ও শতাধিক আহতকে পড়ে থাকতে দেখেছেন।
তিনি আরও জানান, ওই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একটি অস্ত্র গুদামে আগুন ধরে যায়, তাতে আরও বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে ও চারদিকে বোমার শার্পনেল ছিটকে আসতে থাকে, ওই সময় জীবিতরা আহতদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি জানান, তিনি বেশ কিছু আহত সেনাকে প্রাথমিক চিকৎসা দেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে, ট্রাকে ও প্রাইভেট কারে তুলে দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান।
সৈন্যটি জানান, হামলার আগে শিবিরের এয়ার রেইড অ্যালার্ম বাজেনি আর হামলার পর মেসের হলের কোথাও প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ না পেয়ে হতবাক হয়ে যান।
ইউক্রেইনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার আন্তর্জাতিক সেনাদলের মুখপাত্র ভলোদিমির কামিনস্কি জানান, তদন্ত চলতে থাকায় হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করা যাবে না।
ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলোতে অথবা দুটি নিবেদিত আন্তর্জাতিক সেনাদলে বিদেশিরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সেনাদলের একট ইউক্রেইনীয় সেনাবাহিনীর অধীন আর অপরটি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার অধীন। এই দুটি সেনাদলে ইরাক ও আফিগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করা অভিজ্ঞ যোদ্ধারাও আছেন।
সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকা থেকেও অনেক ভাড়াটে সেনা এসে ইউক্রেইনের বাহিনীতে নাম লেখাচ্ছেন। কলম্বিয়ার পুরুষরা নিজ দেশে যে অর্থ কামাই করেন তারচেয়ে অনেক বেশি বেতন পান ইউক্রেইনীয় বাহিনীতে। তবে পরিখা যুদ্ধের ঝুঁকি খুব বেশি।
বিদেশি সেনারা বেতন হিসেবে ইউক্রেইনীয়দের সমপরিমাণ অর্থ পান। প্রতি মাসে তারা মূল বেতন হিসেবে এক হাজার ডলার থেকে ১৭৫০ ডলার পান। আর যুদ্ধ বোনাস হিসেবে প্রতি মাসে আরও অতিরিক্ত তিন হাজার ডলার পান।
রাশিয়াও তাদের বাহিনীতে বিদেশি সেনা ব্যবহার করছে। যাদের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার কয়েক হাজার সেনা আছে।