
২০০৮ সালের পর এবার আবারো সংসদের বাহিরে বাজেট উত্থাপন করা হলো। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তৎকালীন অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।
আজ সোমবার (২ জুন) দুপুর ৩টা থেকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা শুরু করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ১১ মাসের মাথায় অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবার বাজেট দিতে গিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ব্যয় কমিয়েছেন ৭ হাজার কোটি টাকার।
প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।
পরিবহন খাত
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সড়ক ও রেল পরিবহন খাতে নতুন কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে এই খাতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
সোমবার (২ জুন) বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, সরকার টেকসই, নিরাপদ, ব্যয়-সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৯ সালের ‘রোড মাস্টার প্ল্যান’ হালনাগাদকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
রেল খাতে ৩০ বছর মেয়াদি ‘রেলওয়ে মাস্টার প্ল্যান’ অনুযায়ী ডাবল লাইন ট্র্যাক নির্মাণ, গেজ একীভূতকরণ, আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু, সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রেল সংযোগ উন্নয়ন, উন্নতমানের লোকোমোটিভ চালু এবং বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন চালুর মতো প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
অন্যদিকে পরিবহন শিল্পে সহায়তা দিতে বাজেটে টায়ার উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণের শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৬-৪০ আসনের বাস ও ১০-১৫ আসনের মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্ক ও কর হ্রাসের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খা্ত
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ২২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ বাতিল করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় ইতোপূর্বে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ পর্যালোচনার নিমিত্ত একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের শতকরা ৩০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া, সমন্বিত বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে এবং এর আওতায় আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে ৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরিচ্ছন্ন উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিক্ষা খাত
প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে মাত্র ৯৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিক্ষা খাতে বরাদ্দে মিশ্র পরিবর্তন দেখা গেছে। মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমে ৩৫ হাজার ১২৩ কোটিতে দাঁড়ায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা।
একই মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ৯ হাজার ৯৫৩ কোটি করা হয়।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও বিশ্বমানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানের আউটকাম বেজড এডুকেশন পদ্ধতিতে কারিকুলাম হালনাগাদ করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস বৃদ্ধি, গ্র্যাচুইটি প্রদানসহ সব স্তরের শিক্ষকদের মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সকল নাগরিককে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হয়েছে। পাশাপাশি শূন্য পদ পূরণ ও প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট বক্তব্যে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে কেয়ারগিভারদের চাহিদা বিবেচনায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ খাতে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে একদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং অন্যদিকে রেমিট্যান্স আয়ের নতুন সুযোগ তৈরির কথা বলা হয়েছে।
কৃষি খাত
কৃষি মন্ত্রণালয় খাতে ২৭ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচারিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্যাকেজিংসহ হিমাগার ও কোল্ড চেইন কাঠামো শক্তিশালীকরণ, কৃষি পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি পণ্যের সাপ্লাই চেইনের সকল অংশীজনের একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেইজ তৈরি, বিশেষায়িত কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কৃষি পণ্য রপ্তানির জন্য বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য ৫৯টি সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দারিদ্র বিমোচন এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান রয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ৯০১টি কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা দেশে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১ কোটি ২২ লাখ পরিবারকে ৩০ টাকা কেজি দরে মাসে পরিবার প্রতি ৫ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছে।
যুব ও ক্রীড়া খাত
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে সর্বমোট ২৪২৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে ১৪৪০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং পরিচালন খাতে ৯৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন খাতের পরিমাণ ছিল ৬২৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং পরিচালন খাতের পরিমাণ ছিল ৯৫২ কোটি ৮৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে গত অর্থ বছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মোট সংশোধিত বাজেট এর পরিমাণ ছিল ১৫৮০ কোটি ৭৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ এবারের প্রস্তাবিত বাজেট গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪২ কোটি ২১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বেশি।
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্যে বরাদ্দ
তরুণ উদ্যোক্তা ও যুবসমাজের আত্মকর্মসংস্থানে দেশে প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আজ সোমবার (২ জুন) বিকেলে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচারিত রেকর্ডকৃত বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। এটি দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে প্রণীত প্রথম বাজেট।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যুব সমাজের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ লক্ষ্যে তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে ১০০ কোটি টাকার একটি পৃথক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করছি।’ এই তহবিল থেকে উদ্ভাবনী ধারণা ও ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসা তরুণরা সহজ শর্তে ঋণ ও সহায়তা পাবেন বলে জানান তিনি।
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বরাদ্দ
২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উত্থাপিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনা রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদফতর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান।
শিগগির জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচন ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রয়েছে।” বর্তমানে সারাদেশে ১ হাজার ৯০১টি কেন্দ্রে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চা বাগানের তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের প্রতিকেজি ১৯ টাকা দরে গম সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট’ (VWB) কর্মসূচির আওতায় দেশের ১০ লাখ ৪০ হাজার দরিদ্র নারীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে।
এডিপি তে বরাদ্দ কতো?
২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটা বড় বরাদ্দ যাচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে। বরাদ্দের পরিমাণ অনুযায়ী ক্রম সাজালে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত, দ্বিতীয় তে রয়েছে স্বাস্থ্য খাত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে শিক্ষা খাত।
বিগত ৩-৪ বছরের বাজেট সমীক্ষা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এবার সবচেয়ে কম টাকার এডিপি সাজিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সাথে এবারের বাজেটে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত পরিবারদের জন্যেও রাখা হয়েছে বরাদ্দ।
আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার। যা চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। গত ১৮ মে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় যা পাস হয়।
এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। যদিও চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ কমিয়ে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। বছর ব্যবধানে এ খাতের বরাদ্দ কমেছে কমেছে ২০ শতাংশের বেশি।
২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শিক্ষা খাতে। চলতি অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ কমেছে ৮.৪শতাংশ। অন্য খাতগুলোর মধ্যে গৃহায়ন খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা; স্বাস্থ্যে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা; স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা; কৃষিতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ যাচ্ছে।
হিসাব বলছে, শীর্ষ ৫ খাতই বরাদ্দ পেয়েছে এডিপির ৭০ শতাংশ। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে মোট প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ১৪৩টি। যা বাস্তবায়নে স্থানীয় উৎস থেকে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর ৮৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে প্রকল্প সহায়তা।