সচল করা হয়নি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র ‘সিসমোগ্রাফ’। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়কারী এ একমাত্র যন্ত্রটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অচল রয়েছে। ফলে আজকের ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্পসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ভূমিকম্পের তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত একটি চুক্তির আওতায় দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দুটি জেলা শহরে স্থায়ীভাবে এই সিসমোগ্রাফি যন্ত্র স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ যন্ত্রটি স্থাপনের পর মাত্র দুটি ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব হয়। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারিতে যন্ত্রটিতে সমস্যা দেখা দিলে একাডেমিক ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বারের সঙ্গে ইন্টারনেটের পূর্ণাঙ্গ সংযোগসহ ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি পুনরায় চালু করা হয়। কিন্তু চালুর এক বছর না যেতেই আবারও নষ্ট হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূকম্পনের ফলে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, সারফেস এবং রেলি ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে। চারটি ওয়েভ একসঙ্গে সৃষ্টি হলেও প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ওয়েভ দ্রুত ছড়ায়। সারফেস এবং রেলি ওয়েভ পাওয়ার এক-দুই মিনিট আগে সতর্কবার্তা পাওয়া সম্ভব। যদি এই যন্ত্র ২৪ ঘণ্টা মনিটর করা হয়, তাহলে জনগণকে ভূমিকম্প সম্পর্কে আগাম অবহিত করার পাশাপাশি জানমালের ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এছাড়া যন্ত্রের অংশবিশেষ (প্লেট) মাটির নিচে থাকে। এই প্লেটের সাহায্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ভূমির অবস্থান নির্ণয় করা হয়—অর্থাৎ ভূমি ওপরে উঠছে নাকি নিচে নামছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি ১৫ বছর ধরে অচল থাকায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ।
সিসমোগ্রাফ যন্ত্রটির অপারেটিংয়ের দায়িত্বে থাকা পবিপ্রবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুনীবুর রহমান শিক্ষা ছুটিতে জার্মানিতে থাকায় একই বিভাগের অধ্যাপক ড. এস. এম. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, এটি অতি পুরোনো একটি অ্যানালগ মেশিন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই এই মেশিনের কার্যকারিতা কতটুকু—এ ব্যাপারে সিসমোগ্রাফটি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্পের আওতাধীন, তারাই এ বিষয়ে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।



