Image description

জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘জনগণের রায় ছাড়া মানবিক করিডোর দেওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সরকার একা নিতে পারে না।’

বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেলে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বারো আউলিয়ার মাজারে ওরস উপলক্ষে আয়োজিত মেলা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবহেলা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় করিডোর দেওয়ার আগে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি নেওয়া জরুরি। এর আগে আমরা দেখেছি, করিডোরের নামে বিদেশি এজেন্ট ও গোয়েন্দারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি আমরা আর হতে দেবো না।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সরকারের সমালোচনা করে সারজিস আলম বলেন, ‘এই সরকার হাজারো শহীদের প্রাণ ও লক্ষাধিক আহতের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আছে। অথচ এখনও পর্যন্ত একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি, মৌলিক সংস্কার হয়নি। এরকম অবস্থায় নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি হবে। আমরা নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আপত্তি করি না, কিন্তু মৌলিক সংস্কার আগে করতে হবে।’

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিনি পালিয়ে যাননি, বরং তাকে পালাতে দেওয়া হয়েছে। নয় মাস পর তিনি কীভাবে দেশ ছাড়লেন? এটি সরকারের একটি বড় ব্যর্থতা। এর জন্য সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ড. আফিস নজরুলকে জবাবদিহি করতে হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা নানা সুবিধা নিয়েছেন।’

ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, ‘প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা চাই না, ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধে জড়াক। কিন্তু আমরা বারবার দেখেছি, ধর্মীয় উস্কানির মাধ্যমে তারা উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য ও আচরণে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আবার কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করাও অন্যায়। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রুখতে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী শক্তির ঐক্য জরুরি।’

বর্তমানে দেশে মিথ্যা মামলার রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘জেলা শহর থেকে মেট্রোপলিটন শহর পর্যন্ত এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে মিথ্যা মামলা। আমরা চাই, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের নামে মামলা হোক, বিচার হোক এবং শাস্তি হোক। কিন্তু নিরপরাধদের নামে মামলা চলবে না। এতে যারা দায়ী তারা আওয়ামী লীগেরই মতো আচরণ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি মামলা দেওয়ার আগে একটি চক্র গড়ে ওঠে, যারা লিস্ট তৈরি করে টাকা দাবি করে। প্রথমে নাম না দেওয়ার শর্তে, পরে নাম কেটে দেওয়ার নামে এবং শেষে মামলার নিষ্পত্তির সময় আবার টাকা দাবি করা হয়। এই মামলাবাণিজ্যে জড়িত রাজনৈতিক নেতারা এবং পুলিশ সদস্যরা। ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগের দোসরদের আবার রক্ষা করা হচ্ছে।’

সারজিস আলম বলেন, ‘আইন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এই অনিয়মের দায় নিতে হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে, জনগণের মত বদলাতে সময় লাগবে না।’