দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব আয়ে দুর্বলতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী উন্নয়ন ব্যয়ের কারণে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারের মোট ঋণ ২১ ট্রিলিয়ন টাকা বা ২১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত অর্থ বিভাগের ঋণ বুলেটিনে বলা হয়েছে, জুনের শেষে এই পরিমাণ ২১ দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন টাকায় পৌঁছায়, যা এক বছর আগের ১৮ দশমিক ৮৯ ট্রিলিয়ন টাকার চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি।
বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৯ দশমিক ৪৯ ট্রিলিয়ন টাকা, যা মোট ঋণের ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। গত পাঁচ বছর ধরে বৈদেশিক ঋণ ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ২০ ট্রিলিয়ন টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৩৭ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ ঋণও বেড়েছে, যা গত অর্থবছরের ১০ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন টাকা থেকে প্রায় ১১ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ৯৫ ট্রিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ২২ ট্রিলিয়ন টাকা।
পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, বৈদেশিক ঋণ অভ্যন্তরীণ ঋণের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
এই ঋণবৃদ্ধির কারণ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার মহামারির পর উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো থেকে পাওয়া বাজেট সহায়তা এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেল ও মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বড় প্রকল্পগুলোর জন্য করা ব্যাপক ব্যয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে সরকারি ঋণের ধারা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, রাজস্ব সংগ্রহে ধীরগতির কারণে রাজস্ব বাজেটে কার্যত কোনও উদ্বৃত্ত নেই, যার ফলে সরকার উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক— উভয় ঋণের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে।
'ফলস্বরূপ সামগ্রিক ঋণ বাড়ছে। উদ্বেগের বিষয় হলো অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের হারও এখন বেশি। একইসঙ্গে বিদেশি ঋণে অনুদানে খুব কম থাকে বা কোনো অনুদান থাকেই না। আর ঋণের বেশির ভাগ কঠিন শর্তের-উচ্চ সুদ, পরিশোধের সময় কম আর স্বল্প সময়ে (গ্রেস পৃয়ড) অর্থ পরিশোধ শুরু করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি দেশের ঋণ পরিশোধের চাপ তীব্রভাবে বাড়াচ্ছে।



