
অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নারীসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ ও মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এসএএইচআর)’।
সংগঠনটি বলছে, গণহারে হত্যা মামলা, অভিযুক্তদের জামিন থেকে বঞ্চিত হওয়া, বিচারপ্রক্রিয়ায় ফাঁকফোকর ও বিলম্বের মতো বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এমন পরিস্থিতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি। সংকট উত্তরণে দ্রুততম সময়ে জনগণের আস্থা তৈরির মাধ্যমে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি বলে উল্লেখ করেছে তারা।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর পান্থপথে দৃকপাঠ ভবনে ‘আ ইয়ার অব ট্রানজিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন এসএএইচআরের নির্বাহী পরিচালক দীক্সা ইল্লাঙ্গাসিংহে।
গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন এই সংগঠনের তিনজন সদস্য। তারা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যান্য উপদেষ্টা, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সদস্য, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন দীক্সা ইল্লাঙ্গাসিংহে। তিনি বলেন, জুলাই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান অবনতি হয়েছে। জননিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে নিরাপত্তা বাহিনী মব, প্রতিহিংসামূলক হামলা এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উল্লেখ করে দীক্সা ইল্লাঙ্গাসিংহে বলেন, সে জন্য সংবিধান, বিচারব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে জরুরি সংস্কার প্রয়োজন।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তাদের সম্পদ ও উপাসনালয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে দীক্সা ইল্লাঙ্গাসিংহে বলেন, হিন্দু, আহমাদিয়া, সুফি মতাবলম্বীসহ অন্যান্য সম্প্রদায়, সমতল ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী, লিঙ্গভিত্তিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এবং নারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী, ধর্মীয় গোষ্ঠী ও সংগঠিত মবের উদ্দেশ্যমূলক আক্রমণ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
পরিস্থিতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি। সংকট উত্তরণে দ্রুততম সময়ে জনগণের আস্থা তৈরির মাধ্যমে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি বলে উল্লেখ করেছে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে মোট ৯টি পর্যবেক্ষণ ও উদ্বেগ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে: পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী শাসনের সময় প্রণীত দমনমূলক আইনের অব্যাহত প্রয়োগ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর অব্যাহত আক্রমণ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশনের অচলাবস্থা, নাগরিক সমাজের মধ্যে মেরুকরণ ও বিভক্তি গভীর হওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এসএএইচআরের কো চেয়ারম্যান রশমি গোস্বামী, সংগঠনটির অন্যতম সদস্য সারূপ ইজাজ এবং বাংলাদেশ ব্যুরো মেম্বার সাঈদ আহমেদ।