Image description

শিশুশ্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এলেও ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ শিশু বিভিন্ন ধরনের শ্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল; যাদের বড় অংশই ঝুকিপূর্ণ কাজ করছে বলে এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এর মধ্যে ৫ কোটি ৪০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত রয়েছে, যা তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ও আন্তর্জাতিক খেলা দিবস উপলক্ষে ‘চাইল্ড লেবার: গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২৪, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনও লাখ লাখ শিশু শিক্ষা, খেলা ও শুধু শিশু হিসেবে বেড়ে ওঠার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।

প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শিশুশ্রম কমার চিত্র উঠে এলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও ভিন্ন। ২০১৩ সালে দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৭ শতাংশে (প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু)। তবে একই সময়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শ্রমে যুক্ত থাকার হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ায়। ‘ক্ষতিকর কাজে’ যুক্ত বৃহত্তর শিশুশ্রমের হার ২০১৩ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হয়।

কৃষি খাতে ৬১ শতাংশ, সেবা খাতে (গৃহস্থালি কাজ বা বাজারে পণ্য বিক্রি) ২৭ শতাংশ এবং শিল্প খাতে (খনি ও উৎপাদন শিল্প) ১৩ শতাংশ শিশু শ্রম দিচ্ছে বলে প্রতিবেদনের তথ্যে বলা হয়।

সংস্থা দুটির যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট গত দুই দশকে বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বাড়ায় কিছু উন্নতি হয়েছে, তবে বাংলাদেশ এখনো ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সঠিক গতিতে নেই।

“শ্রমে যুক্ত অধিকাংশ শিশু কাজ করছে অনানুষ্ঠানিক খাতে, যেখানে তারা দীর্ঘ সময় ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এই বাস্তবতা পরিবর্তনে বাংলাদেশে জরুরি প্রয়োজন স্থায়ী, দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই প্রচেষ্টা।”

শিশুশ্রম কমার ক্ষেত্রে বর্তমানে যে ধীর গতি এবং ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম পুরোপুরি নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ব। ফলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূল করতে হলে বর্তমানের চেয়ে ১১ গুণ বেশি গতি বাড়াতে হবে, বলা হয় প্রতিবেদনে।

ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমাতে অগ্রগতি থাকলেও সামগ্রিক শিশুশ্রমের হার একই অবস্থায় থাকায়, আরও অনেক কিছু করার ইঙ্গিত দেয় এটি।

“একটি শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে পরিবারগুলোকে সহায়তা প্রদান জোরদার করতে হবে, সব শিশুর জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার সার্বজনীন সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে এবং সমাজসেবা, বিশেষ করে শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। শিশুদের স্থান স্কুল ও খেলার মাঠে, কর্মক্ষেত্রে নয়।”

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুঞ্জন ডালাকোটি আইএলও কনভেনশন নম্বর ১৩৮ ও ১৮২ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এর পাশাপাশি জাতীয় আইনগত কাঠামোর মাধ্যমে শিশুশ্রম নিরসনের আহ্বান জানান তিনি।

সেই সঙ্গে শিশুশ্রম নিরসনের অগ্রগতির স্থবিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। িতিনি বলেন, অর্থপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করতে কমিউনিটি, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক সংগঠন, সুশীল সমাজ, এনজিও ও সংবাদমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

সরকার ও অংশীদারদের প্রতি ইউনিসেফ ও আইএলওর আহ্বান অসহায় পরিবারগুলোর জন্য জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করা, যাতে তাদের শিশুশ্রমের ওপর নির্ভর করতে না হয়। এর মধ্যে সার্বজনীন শিশু ভাতার মতো সামাজিক সুরক্ষা নেটওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা- যাতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের চিহ্নিত করা যায়, শিশুশ্রম প্রতিরোধ করা যায় এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা দেওয়া যায়।

প্রতিটি শিশুর জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা। প্রাপ্তবয়স্ক ও তরুণদের জন্য সম্মানজনক কাজ ও উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক সুযোগ নিশ্চিত করা। শোষণ বন্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সাপ্লাই চেইনের সর্বত্র শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে আইন প্রয়োগ ও ব্যবসায়িক জবাবদিহিতা জোরদার করা।