
তালেবান সরকারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকের পর আফগানিস্তানের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বন্ধ থাকা দূতাবাস পুনরায় খোলার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
শুক্রবার আফগান তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠকের পরে এ ঘোষণা দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
সকালে কাবুলে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির পাশে বসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, কাবুলে ভারতের টেকনিক্যাল মিশন পূর্ণাঙ্গ দূতাবাসে উন্নীত করা হবে।
জয়শঙ্কর সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ভারত আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতার প্রতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, কাবুলে ভারতের টেকনিক্যাল মিশনকে দূতাবাসের মর্যাদা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ভারতের ‘গভীর আগ্রহ’ রয়েছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, এরই মধ্যে আফগানিস্তানে চলমান ভারত-সমর্থিত বহু প্রকল্পের পাশাপাশি আরও ছয়টি নতুন প্রকল্প হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জয়শঙ্কর।
২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর ভারত সেখানে দূতাবাস বন্ধ করেছিল। তালেবান সরকারকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি ভারত।
তবে গত কয়েক মাসে সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। এর মধ্যেই রাজধানী কাবুলে আবার পুরোদমে দূতাবাস চালুর ঘোষণা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলের পর গত ৪ বছর ধরে কাবুলে দূতাবাসের বদলে ‘টেকনিক্য়াল মিশন’ চালাচ্ছিল ভারত। ছোট শহরগুলোতে কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
আফগান জনগণের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভারতের ‘দীর্ঘস্থায়ী সহায়তার’ কথাও উল্লেখ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় ভারতের সহযোগিতা তুলে ধরে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে ২০টি অ্যাম্বুলেন্স, আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, টিকা ও ক্যানসারের ওষুধ সরবরাহের ঘোষণা দেন তিনি।
চার বছর আগে তালেবান ও তৎকালীন আফগান সরকারের মধ্যে সংঘাতের কারণে কাবুলে ভারতের দূতাবাসের মর্যাদা হ্রাস করা হয়েছিল এবং ছোট শহরগুলোতে কনস্যুলেট অফিসগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
সহিংসতার কারণে একপর্যায়ে সামরিক বিমান মোতায়েন করে দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় ভারত।
এর ১০ মাস পর কাবুলে কূটনৈতিক উপস্থিতি পুনরায় শুরু করে ভারত। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে জানায়, দিল্লি যদি আফগান রাজধানীতে কর্মকর্তা পাঠায়, তাহলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এরপরই সেখানে একটি টেকনিক্যাল দল পাঠানো হয়।
তবে ২০২৫ সালের অক্টোবরে এসে দুই দেশের সম্পর্ক আরও উষ্ণ হয়। এর প্রতিফলন দেখা যায় তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকির বক্তব্যে, ‘আফগানিস্তানের মাটি কোনোভাবেই ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।’