আপনজনের মৃত্যুতে সীমাহীন কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। মহান আল্লাহ এই কষ্টের বিনিময় দান করবেন। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা।
আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ (নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব) বলে আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে হবে। ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। মনকে শক্ত করার চেষ্টা করতে হবে।
পরিবার-পরিজন বা আত্মীয়ের মৃত্যুতে ইসলামেও শোক প্রকাশের অনুমোদন রয়েছে। এমনকি মৃত্যু শোকে নিঃশব্দ কান্না করা যাবে; অশ্রু বিসর্জন দেওয়া যাবে। তবে উচ্চ আওয়াজে বিলাপ করা যাবে না।
সবচেয়ে উত্তম হলো শোক প্রকাশ করে মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া করা। মৃতব্যক্তির পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়দের জন্য দোয়া করা। ইসলামের দিকনির্দেশনাও এমনই—
কেউ মারা গেলে তার জন্য শোক প্রকাশ করা এবং শোক প্রকাশে এ দোয়াটি পড়া উত্তম। তাহলো-
أَعْظَمَ اللهُ أَجْرَكَ وَ اَحْسَنَ عَزَائَكَ وَ غَفَرَ لِمَيِّتِكَ
উচ্চারণ: ‘আ’জামাল্লাহু আঝরাকা ওয়া আহসানা আযাআকা ওয়া গফারা লিমায়্যিতিকা।’
অর্থ: ‘আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতিদান বাড়িয়ে দিন। তোমাকে উত্তম সান্ত্বনা দিন। তোমার মৃতব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন।’ (নববি : আল আযকার)
ছোট্ট ও সংক্ষিপ্ত এ দোয়ায় রয়েছে শোকাবহদের জন্য কল্যাণ, রয়েছে মৃতব্যক্তির জন্য ক্ষমার আহ্বান।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যার কোনো প্রিয়জনকে উঠিয়ে নিই আর সে ধৈর্য ধারণ করে এবং নেকির আশা রাখে আমি তাকে জান্নাত দিয়েই সন্তুষ্ট হব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪০১)
এর পরও নীরব কান্নায় চোখ অশ্রুসজল হবে। মনের বেদনায় চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকবে। তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু চিৎকার করে, ইনিয়ে-বিনিয়ে, বুক চাপড়ে কাঁদা, মাতম করা এবং জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা ইসলামের পদ্ধতি নয়। এগুলো জাহিলি যুগের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি।
আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে শোকে গালে চপেটাঘাত করে, জামার অংশবিশেষ ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি যুগের মতো চিৎকার করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১২৩৫; মুসলিম, হাদিস : ২৯৬)
ইসলামি বিধান অনুযায়ী মৃতের জন্য তিন দিন পর্যন্ত শোক পালন করা যায়। আর কোনও নারীর স্বামী মারা গেলে তার জন্য চার মাস ১০ দিন পর্যন্ত ইদ্দত পালন বা শোক প্রকাম করতে হয়। অর্থাৎ এই সময়টায় অন্যত্র বিয়েশাদি করা যায় না। ইদ্দত চলাকালীন শোকের প্রভাব থাকে। সাজসজ্জা, বিয়েশাদি পরিহার করে অনেকটা নির্জনতায় সময় কাটাতে হয়। এরপর স্বাভাবিক জীবন শুরু হয়।
শোকার্ত মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়া, সমবেদনা জানানো, যথাসাধ্য খোঁজখবর নেওয়া ও সহযোগিতা করা ইসলামের অন্যতম মানবীয় সদাচরণ। বিধবা, এতিম ও সন্তানহারা মায়ের প্রতি সমবেদনা প্রদর্শন করতে নবী (সা.) বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। কারণ তাদের শোক বর্ণনাতীত। তাদের অসহায়ত্ব সীমাহীন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সন্তানহারা মাকে যে সান্ত্বনা দেয় জান্নাতে তাকে বিশেষ পোশাক পরানো হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৭৬)
নবীজি আরো বলেন, ‘স্বামীহারা নারী ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড়ে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে নামাজে দণ্ডায়মান ও দিনে রোজা পালনকারীর মতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)
এতিমের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি ও এতিমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে (নিকটবর্তী) থাকব। এ কথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলির মাঝে সামান্য ফাঁক করলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯৯৮)
শোক এক দিনেই শেষ হয়ে যায় না। ক্রমান্বয়ে অনেকটা সহনীয় হয়। তবে প্রিয়জনের মৃত্যুশোক স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়। মাঝে মাঝে মনের কোঠায় ভেসে উঠে মনকে ব্যথিত করে। সে ক্ষেত্রে আবারও ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলে আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে হবে। প্রিয়জনের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করতে হবে। ইস্তিগফার করতে হবে। সুযোগমতো কবর জিয়ারত করতে হবে।



