চিকিৎসা পরিভাষায় 'বাথরুম স্ট্রোক' বলে নির্দিষ্ট কোনো রোগ না থাকলেও বেশিরক্ষেত্রেই দেখা যায় স্ট্রোক (Stroke) বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের (Cardiac Arrest) মতো ঘটনাগুলো বাথরুমেই হচ্ছে। বিশেষত বয়স্ক আর উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিদের এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে।
বাথরুমে এমন শারীরিক বিপর্যয় ঘটার পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি সুস্পষ্ট শারীরিক প্রক্রিয়া এবং পরিবেশগত কারণ রয়েছে। এগুলো সম্পর্কে চলুন জেনে নিই-
ভালসালভা ম্যানুভার (Valsalva Maneuver)
স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের জন্য শৌচাগারকে বিপদজনক করে তোলার প্রধান কারণ হলো 'ভালসালভা ম্যানুভার'। সাধারণ ভাষায় এটি বলতে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেওয়া বা 'কোঁত দেওয়া' বুঝায়। সবচেয়ে বেশিই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক এই কারণেই হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হলে, পেটের ভেতরের এবং বুকের ভেতরের চাপ হঠাৎ বেড়ে যায়। এই চাপ সরাসরি মস্তিষ্কের রক্তনালী এবং হৃদযন্ত্রে প্রতিফলিত হয়।
হঠাৎ এই রক্তচাপের স্পাইক (Spike) বা উল্লম্ফন মস্তিষ্কের দুর্বল রক্তনালীকে ছিঁড়ে দিতে পারে, যার ফলে হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, এই চাপের কারণে হার্টবিট বা হৃদস্পন্দনে অনিয়ম দেখা দিতে পারে। এতেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন
ঠান্ডা ও গরম পানির ব্যবহার বাথরুমে আরেকটি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করলে রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয় (Vasodilation), যা রক্তচাপ হঠাৎ কমিয়ে দিতে পারে। এতে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে মাথা ঘোরানো বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অন্যদিকে গরম পরিবেশ থেকে হঠাৎ ঠান্ডা পানি প্রবেশ করলে বা মাথায় ঠান্ডা পানি ঢাললে রক্তনালীগুলো দ্রুত সংকুচিত (Vasoconstriction) হয়। এটি রক্তচাপকে হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অন্যান্য কারণ
ডিহাইড্রেশন: রাতে পর্যাপ্ত পানি পান না করলে সকালে শরীর ডিহাইড্রেট থাকে। আর সকালে মলত্যাগের সময় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা: শৌচাগারে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে পা ও শরীরের নিচের অংশে রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি হয়। এতেও ঝুঁকি বাড়ে।
ঝুঁকি এড়াতে করণীয়
মল নরম রাখা: কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন এবং খাদ্যতালিকায় ফাইবারজাতীয় খাবার (শাকসবজি, ফল) রাখুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অতিরিক্ত চাপ এড়িয়ে চলা: মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। মল সহজে না আসলে জোর করবেন না।
গোসলের নিয়ম: গোসলের সময় তাপমাত্রার চরম পরিবর্তন এড়িয়ে চলুন। প্রথমে পা বা শরীর ঠান্ডা বা গরম পানির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে গোসল শুরু করুন। কখনোই সরাসরি মাথায় ঠান্ডা বা অতিরিক্ত গরম পানি ঢালবেন না।



