
সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি জানান, সমাজ তাকে সবচেয়ে ‘খারাপ নারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সম্প্রতি একটি দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এসব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
বাঁধন লেখেন, ‘একসময় আমি ভারী মিষ্টি বাচ্চা একটা মেয়ে ছিলাম- মেধাবী, দয়ালু, এবং সবসময় সমাজের প্রত্যাশানুযায়ী পোশাক পরতাম। আমার বাবা-মা আমাকে যা পরতে বলতেন, সমাজ যা “শালীন” বলে মনে করত- আমি তাই পরতাম। কিশোর বয়সে আমি কখনও জিন্স পরিনি, কারণ সমাজের চোখে এটা কেবল “বাজে মেয়েরা” পরে। একটা পারফেক্ট মেয়ে হওয়ার জন্য মনস্থির করেছিলাম- সমাজ আমার কাছে যা চায়, তার সেরা ভার্সন। কিন্তু তারপর, আমার পৃথিবী ভেঙে পড়ল।’
তিনি জানান, ‘আমি ডিভোর্স চেয়েছিলাম- একটা অত্যাচারিত, বেদনাদায়ক বিবাহ থেকে যা দিনশেষে আমাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঠেলে দিয়েছিল। সেসময়ে ২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। সেই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমি নিজেকে আবিষ্কার করি- কেবল একজন নারী হিসেবে নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবে। আমি তখনও লাজুক, তখনও সত্যবাদী ছিলাম- আমি আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে শুরু করি এবং পুনরায় জীবনকে ভালোবাসতে শুরু করি। এজন্য আমি সবসময় সেই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।’
তিনি আরও লেখেন, ‘তারপরও আমার মনে “শ্রেষ্ঠ নারী” হওয়ার অভিলাষ ছিল, যা সমাজে প্রশংসা কুড়াতে পারে। তবে সেই সময়ে আমি জিন্স পরেছি। এমন পোশাক পরেছিলাম, যা আমার গায়ের রংকে ফুটিয়ে তোলে। এমন পোশাক, যা “ভদ্র মেয়েদের” পরা উচিত ছিল না!’
‘দ্বিতীয় বিবাহবিচ্ছেদের পর আমি কেবল ব্যর্থতার অনুভূতিই অনুভব করিনি, আমার মনে হয়েছিল যে সমাজ আমাকে সবচেয়ে “খারাপ নারী” বলে চিহ্নিত করেছে। সেই তকমা আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছিল। আমি আমার পুরো জীবন “সেরা” হওয়ার চেষ্টা করে কাটিয়েছি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে সেই ব্যর্থতার মধ্যদিয়ে সমাজ আমাকে যে ভূমিকা পালন করাতে চেয়েছিল, তার পরিবর্তে আমি একজন মানুষ হওয়ার সাহস পেয়েছি। আমি আমার অধিকারের দাবি তুলতে শুরু করি। আমি আমার স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করি। একদিন এক বন্ধু ফোন করে বলল, “তুমি খুব বাস্তবসম্মত কথা বলো। তুমি খুব ভালো করছো, তবে তোমার আরও শালীন পোশাক পরা উচিত।” আমি হেসে ফেললাম।’
স্লিভলেস ব্লাউজ পরার বিষয়ে বাঁধন লেখেন, ‘একবার আমি এক টিভি সাক্ষাৎকারে স্লিভলেস ব্লাউজ পরে গিয়েছিলাম। চ্যানেল টিম আমাকে চুল দিয়ে কাঁধ ঢাকতে বলেছিল। তারা আমাকে বিরাট লেকচার দিয়েছিল। বছরের পর বছর, আমি কীভাবে পোশাক পরব সে সম্পর্কে অসংখ্য পরামর্শ পেয়েছি, একজন মা হিসেবে, একজন “বিচক্ষণ নারী” হিসেবে, একটি রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হিসেবে।’
তিনি জানান, ‘কিন্তু জানেন কি? আমার আর কিছু যায় আসে না। আমি স্বাধীন। আমাকে কী পরতে হবে, কী বলতে হবে, কী ভাবতে হবে বা কীভাবে বাঁচতে হবে- তা বলার অধিকার কারও নেই। এটা আমার সিদ্ধান্ত, একান্তই আমার।’
নারীদের নিয়ে সমাজের মানসিকতা প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘এই ধরনের জাজমেন্ট আমাকে খুব হতাশ করে, বিরক্ত করে তোলে। কিন্তু এই ধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা নারীরা প্রতিদিন হই। এই সমাজে মানুষের একটাই লক্ষ্য বলে মনে হয়: নারীদের সংশোধন করা। যেন এটাই স্বর্গের সবচেয়ে বিশুদ্ধ পথ!’
স্ট্যাটাসের শেষে বাঁধন লেখেন, ‘কিন্তু আমার কথা শোনো, আমার বন্ধুরা- তোমরা যদি এসব বিশ্বাস করো, তাহলে তুমি একজন বোকা। বেহেশতের রাস্তা তোমার নিজের কর্মকাণ্ডের দ্বারাই প্রশস্ত হয়, অন্যের ওপর নজরদারি করে নয়; বিশেষ করে নারীদের কবজা করে নয়।’
সূত্র: জাগো নিউজ