আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি (ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র) এলাকায় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষজন উল্লাস প্রকাশ করেছেন। রায়কে স্বাগত জানিয়ে কেউ কেউ টিএসসি চত্বরে মিষ্টি বিতরণ করেন।
মিষ্টি বিতরণের সময় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন এবং রায়কে স্বাগত জানিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আদালত আরও বলেন, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনও দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
এদিকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা আসনে বসেন। পিনপতন নীরব পরিবেশে আদালতে একমাত্র গ্রেপ্তার হওয়া আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এসময় দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি এবং প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে মারাত্মক আহত করার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আলোচিত এই মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এই মামলায় বিচারের জন্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। বিচার চলাকালে মোট ৫৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশিত অডিও, ভিডিও ও অন্যান্য প্রমাণ আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হয়। তবে মামলার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হয়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করে অন্য আসামিদের সব অপরাধের বর্ণনা দেন।
এ মামলায় সাক্ষীরা হলেন জুলাই অভ্যুত্থানে মারাত্মক আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ, পুলিশের গুলিতে আহত আব্দুল্লাহ আল ইমরান, পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো দিনমজুর পারভীন, রংপুরের এনটিভির সাংবাদিক এ কে এম মঈনুল হক, রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু, শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের বড় ভাই রবিউল হাসান, ইবনে সিনা হাসপাতালের ডা. হাসানুল বান্না, শহীদ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল, ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের নিউরোট্রমা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মাহফুজুর রহমান, রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ আবু সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকারী চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম, রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা, জুলাই আন্দোলনে শহীদ মারুফ হোসেনের বাবা মো. ইদ্রিস, সাংবাদিক মোহিদ হোসেন, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, জুলাই আন্দোলনের ১ নম্বর সমন্বয়ক ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও জবানবন্দি দিয়েছেন প্রসিকিউর তানভীর হাসান জোহা, সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, আহত শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার, শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি, প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অফিস সহকারী মো. গিয়াস উদ্দিন, কুষ্টিয়ার সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেলের মা হোসনে আরা বেগম, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী, তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রমুখ।



