Image description

কবি বলেছেন, "বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়"। তিনি সন্ন্যাসী হতে চাননি কখনো। তাই ব্যারিস্টারি ডিগ্রীর তোয়াক্কা না করে গৃহের টানে বিলেত ছেড়ে দেশে পাড়ি জমান আজন্ম সংসারী অথচ খাঁটি ঈশ্বর প্রেমীক রবীন্দ্রনাথ।

১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদীয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন তিনি। এ সময়েই কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে আগমন কবিগুরুর।

আগামী বুধবার (৮ মে) পঁচিশে বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে উদযাপিত হতে যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩-তম জন্মজয়ন্তী উৎসব।

পড়ন্ত বৈশাখের বর্ণিল এই উৎসবকে সামনে রেখে কুঠিবাড়িতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। একদিকে বাঁশ, কাঠ ও ত্রিপল দিয়ে চলছে মঞ্চ তৈরি। অন্যদিকে রং তুলির শেষ আঁচড়ে কুঠিবাড়িকে ঝকঝকে তকতকে করতে ফুসরত নেই শিল্পীদের।

জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বসবে দুইদিন ব্যাপী গ্রামীণ মেলা। রং বেরঙের বাহারি পণ্য দিয়ে দোকান সাজাতে ব্যস্ত তাই দোকানীরা। আয়োজনের কোথাও রাখছেন না কোন ত্রুটি।

জন্মজয়ন্তী উদযাপনের প্রস্তুতির সকল কর্মকান্ড তদারকি করেছেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি চলমান রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এ বছর ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাংসদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত থাকবেন ৭৮ কুষ্টিয়া -৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ।

এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করবেন দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা ৫৯ টি রবীন্দ্র সংগীতের দল।

উল্লেখ্য, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এই অঞ্চলে জমিদারি পান। কবিগুরু ১৯০১ সাল পর্যন্ত শিলাইদহে জমিদারি পরিচালনা করেন।

পদ্মা পাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবি একে একে রচনা করেন সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালীসহ বিখ্যাত সব গ্রন্থ।

কুঠিবাড়ির এই কুঠিরে বসেই করেন গীতাঞ্জলি কাব্যের অনুবাদ। যে কাব্য দিয়েই ১৯১৩ সালে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন ভানুসিংহ ছদ্ম নামের রবীন্দ্রনাথ। অসংখ্য গান, কবিতা, চিঠি, চিত্রকর্ম ও সাহিত্য শিলাইদহকে করেছে রবীন্দ্রসাহিত্যের অবিচ্ছেদ্য।

এবছর কুঠিবাড়ি চত্বরে স্থায়ীভাবে নির্মিত মঞ্চে কবিগুরুর গান, কবিতাও শিল্প-সাহিত্যের আলোচনায় মুগ্ধতা ছড়াবেন সাহিত্য সমালোচক ও দেশ-বিদেশের বরেণ্য রবীন্দ্র শিল্পীবৃন্দ।

রবীন্দ্র সাহিত্য ও সুরের মূর্ছনায় সাহিত্য ও ব্যক্তি জীবনের অনুপ্রেরণা পাবেন এমন ধারণা ভক্ত অনুরাগীদের।

সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে এবারের রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী। আয়োজনকে সফল করতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও নিয়েছে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ।

শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান হিসেবে কর্মরত আছেন আল-আমিন হুসাইন। তিনি জানান, বিশ্বকবির ১৬৩তম জন্ম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং জেলা প্রশাসন কুষ্টিয়ার উদ্যোগে কুঠিবাড়িতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উৎসব। অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে শিলাইদহ কুঠিবাড়ির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ সকল কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সকল কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহা. আকিবুল ইসলাম ইসলাম আকিব জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর তরফ থেকে সকল প্রস্ততি নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের একটা মিটিং হয়েছে। অনুষ্ঠান এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতিথি ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবো বলে আশা করছি।

কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উদযাপন বিষয়ে কুমারখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহে বেসরকারিভাবে বিশ্বকবির ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। বিরূপ আবহাওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকলে আয়োজনে নেই কোন গরিমসি। সকলের সহযোগীতায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে পারবো বলে মনে করি।